অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার ফলে অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে।সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি চুলের রং পরিবর্তন হয় তাহলে তা অস্বাভাবিক নয়।কিন্তু অল্প বয়সে চুলের সাদা হয়ে যাওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক।
অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে হওয়ার কারনসমুহঃ
সাধারণত মানবদেহের ত্বকে চুলের লক্ষ লক্ষ ফলিকল বা থলি রয়েছে যেগুলো রঞ্জক কোষ তৈরি এবং ম্যালানিন ধারন করতে সক্ষম।মানবদেহের ত্বকের এ ফলিকল/রঞ্জক থলি গুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেই আস্তে আস্তে চুল সাদা হতে থাকে।বিভিন্ন রকম কারনে অল্পবয়সেই এ চুল সাদা হতে থাকে।যেমনঃ
জিনগত কারনঃ অল্পবয়সে চুলের রং পরিবর্তন এর একটি অন্যতম কারন জিনগত কারন। যদি কোনো ব্যক্তির বংশগত সমস্যা থাকে অর্থাৎ বাবা মায়ের যদি অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যায় তাহলে তা সন্তানের মধ্যে ও পরিলক্ষিত হয়
ভিটামিনের ঘাটতিঃ বিভিন্ন ভিটামিন যেমন ভিটামিন-বি১২,ভিটামিন-বি৫,ভিটামিন-বি৬,ভিটামিন-বি৯,ভিটামিন ডি,ভিটামিন ই এবং বায়োটিন ইত্যাদির ঘাটতির কারনেও চুল সাদা হয়।
মিনারেলের ঘাটতিঃ বিভিন্ন মিনারেল যেমনঃজিংক,ক্যালসিয়াম,কপার ইত্যাদির কারনেও চুলের রং এর পরিবর্তন হয়
দুঃশ্চিন্তাঃ দুঃশ্চিন্তার কারনেও চুলের উপর অনেক প্রভাব পড়ে যার কারনে চুল সাদা হয়ে যায়।
ধূমপানঃ ধূমপানে অল্পবয়সী ব্যাক্তিদের চুলে অনেক প্রভাব ফেলে।সিগারেট বিদ্যমান বিষাক্ত নিকোটিন চুলের ফলিকল গুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
হরমোনের প্রভাবঃ থাইরয়েড হরমোন এর পরিবর্তন অর্থাৎ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে দেহে ম্যালানিন এর উৎপাদন কমে যায় ফলে চুলের রং এর ও পরিবর্তন হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রোটিন এর ঘাটতি এবং বিভিন্ন রকম কোমল পানীয়,অস্বাস্থ্যকর খাবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার ফলেও চুলের রং এর এরকম পরিবর্তন এবং চুল দূর্বল হয়ে পড়ে
সাধারণত অল্পবয়সে চুলের রং পরিবর্তন অথবা সাদা হয়ে যাওয়া এর স্থায়ী কোনো প্রতিকার এখনো সম্ভব হয় নি ।এজন্য প্রতিরোধ ই সর্বোত্তম।
প্রতিকারঃ
সাধারণত অভ্যাসের পরিবর্তন ও সুষম খাবারের মাধ্যমে এই সমসা সমাধান করা সম্ভব।পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধমে এবং ধুমপানের কুঅভ্যাস থেকে বিরত থেকে এর সমাধান সম্ভব
বিভিন্নরকম খাবার যেগুলো চুলকে সাদা হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে যেমনঃ
- সবুজ সবজিঃ সবুজ সবজিতে সব ধরনের ভিটামিন বি এবং আয়ন বিদ্যমান এগুলো শরিরের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে যা চুলে অক্সিজেন, নিউট্রিয়েন্ট এবং আয়নের মাত্রা সরাবরাহ করে।
- মাশরুমঃ মাশরুম ম্যালানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় যা চুলের জন্য খুবই উপকারী
- ব্রকলিঃ ব্রকলিতে ভিটামিন-এ,ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফলিক এসিড থাকে যেগুলো স্বতেজ চুল উৎপাদনে সাহায্য করে।
- স্ট্রবেরিঃ স্ট্রবেরিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি বিদ্যমান যা কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে এটিও চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
- আমলকীঃ এটিও ভিটামিন-সি এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস।আমলকীতে এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান।আমাদের দেহে প্রচুর এসিড সৃষ্টি হয় যা চুলের সাদা হওয়ায় সাহায্য করে।আমলকীতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের এসিডের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে।
- সূর্যমুখী বীজঃ এতে ভিটামিন-ই এবং জিংক বিদ্যামন।এটি চুলের গোড়ার রক্তসঞ্চালন সচল রাখে যার ফলে অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করা সম্ভব জিংক চুলের বৃদ্বিতে সহায়তা করে।এতে বায়োটিন ও ভিটামিন-বি১২ রয়েছে
- সালমনিয়া মাছঃ যাতে প্রচুর প্রোটিন ওমেগা, ফ্যাটি এসিড এবং সালমনিয়া নামক মিনারেল থাকে যা তালুর ত্বক ও চুলকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও পুষ্টিসমৃদ্ব খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়,অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ধূমপানের কুঅভ্যাস ত্যাগ করার মাধ্যমে অকালে চুল সাদা হওয়া থেকে প্রতিরোধ পাওয়া সম্ভব।
তথ্যসুত্রঃ
https://www.healthline.com/health/white-hair
https://www.medicalnewstoday.com/articles/320288#causes-of-white-hair
সোহাগ মজুমদার তন্ময়
বায়োকেমিষ্ট্রি এবং বায়োটেকনোলজি
ইউনিভার্সিটি ওফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং
Leave feedback about this