সংকোচ, অসচেতনতা, অবহেলা- এই তিনটি শব্দের প্রয়োগ যখন বাস্তব জীবনে দেখা যায় তখন তা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। বলছি, স্তন ক্যান্সারের কথা। আমাদের দেশে নারীরা স্তন ক্যান্সার নিয়ে বরাবরই উদাসীন। “আমি তো সুস্থ, ডাক্তারের কাছে কেন যাব?”- এ ধরনের মানসিকতা অবশেষে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার এর চিকিৎসা করানো হলে একজন নারীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
একজন রোগী স্তন ক্যান্সারের কোন ধাপে রয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই একজন চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। মরণঘাতী এই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু চিকিৎসা ব্যাবস্থা রয়েছে-
সার্জারি: সার্জারির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষগুলো স্তন থেকে অপসারণ করা হয়। তবে ক্যান্সারের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে স্তন কেটে ফেলতে হয়।
কেমোথেরাপি: এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করার জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ক্যান্সার যদি স্তনসহ আশেপাশের কোষে ছড়িয়ে পড়ে তখনও এ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।
হরমোনাল থেরাপি: সাধারণত ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধির জন্য হরমোনের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে হরমোন নিঃসরণ ব্লক করে দেওয়া হয় যাতে ক্যান্সার কোষ এর বৃদ্ধি না হয় এবং আশেপাশের কোষে ছড়িয়ে না পড়ে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে হরমোন ব্লকিং থেরাপি। অনেকসময় সার্জারির পরে হরমোন থেরাপি দেওয়া হয় যেন পুনরায় ক্যান্সার ফিরে না আসে।
রেডিয়েশন থেরাপি: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রশ্মি যেমন: প্রোটন বা এক্স-রে ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধের জন্য প্রতিকারই উত্তম। কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যেমন: ধূমপান ও মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দীর্ঘক্ষণ অন্তর্বাস পরিধান না করা, পরিবারের কারো পূর্ব ইতিহাস থাকলে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা, দীর্ঘ সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি।
আমাদের দেশে নারীদের আফিস সামলে, ঘরের কাজ সামলে নিজের দিকে আর তাকানো হয় না। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি অক্টোবর মাসে ‘জেগে উঠুন, জেনে নিন’– প্রতিপাদ্য নিয়ে উদযাপিত হয় স্তন ক্যান্সার সচেনতার মাস যার লক্ষ্য নারীদের সচেতন করা, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া।
সাদিয়া জামান
ডিরেক্টর অব ডেইলি সায়েন্স প্রজেক্ট, বায়ো ডেইলি
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা- ১১০০
সূত্র:
Leave feedback about this