এইডস এর কারন হল এইচ আইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়ান্স) ভাইরাস দ্বারা সংক্রমন। এইচ আইভি ভাইরাসের উৎপত্তি হয় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রাইমেট বর্গের প্রাণিদেহে।
এইচ আইভি ভাইরাসের দুইটি ধরন রয়েছঃ এইচ আইভি -১ ও এইচ আইভি -২। এইচ আইভি-১ অত্যন্ত ক্ষতিকর, সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশির ভাগ এইচ আইভি সংক্রমণ এই ভাইরাস দ্বারাই হয়ে থাকে। এইচ আইভি-২ সাধারণত কম সংক্রমিত হয় এবং সামগ্রিক ভাবে পশ্চিম আফ্রিকাতে সীমাবদ্ধ।
এইচ আইভি ভাইরাসের উৎপত্তি ও সংক্রমন নিয়ে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। সবথেকে গ্রহণযোগ্য থিওরটি হল ১৯২০ সালের দিকে শিম্পাঞ্জির দেহ থেকে মানবদেহে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে এবং এর কারণটি ছিল শিম্পাঞ্জিটির দেহে শিমিয়ান ইমিউনো ডেফিসিয়ান্সি ভাইরাস ( এস আই ভি) এর উপস্থিতি যা এইচ আইভি ভাইরাসের সাথে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত, আফ্রিকা এর কঙ্গো এর মানুষ এটি শিকার করে খাওয়ার ফলে ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমিত হয়।
এইচ আইভি ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় ফলে সহজেই রুগী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন এইডস রুগী রয়েছে। কিন্তু এই রোগের কার্যকর কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আজও পাওয়া যায়নি। অ্যান্টিরেট্রো ভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে রোগী দীর্ঘদিন সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।
২০০৮ সালে বার্লিন রুগী ও ২০১৯ সালে লন্ডন রুগীর এইডস থেকে মুক্ত হওয়ার পর চিকিৎসক ও গবেষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
টিমোথি ব্রাউন বা বার্লিন রুগী এইডস এর পাশাপাশি লিউকেমিয়া বা এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তখন তিনি এমন এক জন ডোনারের কাছ থেকে বোন ম্যারও ট্র্যান্সপ্লান্ট গ্রহন করেন যিনি স্বাভাবিকভাবেই এইচ আইভি প্রতিরোধ করতে পারতেন।
তার শরীরে সিসিআর ৫ জিনে মিউটেশনের কারনে, যেটি মানবদেহে এইচ আইভি ভাইরাস প্রবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রোটিন। এভাবেই তিনি এইচ আইভি থেকে মুক্ত হন।
২০১৯ সালে অ্যাডাম ক্যাস্টিলেজো বা লন্ডন রুগি ও অনুরুপ পদ্ধতিতে স্টেম সেল ট্র্যান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে এইচ আইভি থেকে মুক্ত হন। স্টেম সেল ডোনারের দেহে এমন কিছু অসাধারন জিন ছিল যা লন্ডন রুগীকে এইচ আইভি প্রতিরোধে সাহায্য করেছিল। স্টেম সেল ট্র্যান্সপ্লান্ট এর সেল গুলি এইচ আইভি ভাইরাসকে মানবদেহে রেপ্লিকেট করতে বাধা প্রদান করে রুগির ইমিউনো সেলকে ডোনারের সেল দ্বারা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে।
কিন্তু এই দুই রোগী ক্যান্সারের চিকিৎসার মাধ্যমে এইডস থেকে নিরাময় লাভ করেছেন তাই এখনি এ পদ্ধতিকে এইডস এর চিকিৎসা বলা না গেলেও জেনেটিক পদ্ধতিতে এইডস নিরাময় একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
অন্বেষা সাহানী
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।
তথ্য সূত্রঃ
1.https://indianexpress.com/article/india/hiv-caring-community-bids-farewell-to-timothy-brown-first-patient-to-be-declared-as-cured-6664243/
2.https://www.bbc.com/news/health-51804454
3.https://www.avert.org/about-hiv-aids/cure
Leave feedback about this