মানব প্রজনন জীববিজ্ঞানের অন্যতম একটি চমকপ্রদ বিষয়, যার মাধ্যমে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে। প্রজনন কেবলমাত্র জীববৈচিত্র্য এবং প্রজাতি টিকিয়ে রাখার উপায় নয়, বরং মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক অংশ।
মানব প্রজনন সম্পর্কিত সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ শুক্রাণুর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্যতম ও দ্রুতগামী শুক্রাণু ডিম্বাণুতে পৌঁছে নিষেক ঘটায়। কিন্তু গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে এখন বলা যায় যে, একটি জটিল রাসায়নিক যোগাযোগ ব্যবস্থার(Chemical Communication) মাধ্যমে ডিম্বাণুই শুক্রাণুকে নির্বাচন করে।
ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মধ্যে একটি রাসায়নিক যোগাযোগ নিষেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে এগোয়, তখন ডিম্বাণু বা নারীর প্রজনন ব্যবস্থা থেকে নির্গত সংকেত শুক্রাণুর আচরণকে প্রভাবিত করে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই সংকেত শুধুমাত্র শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর দিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কাজ করে।
তবে, ২০২০ সালের একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে, ডিম্বাণুর নিজস্ব একটি ক্ষমতা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে আকর্ষণ করতে পারে এবং অন্য শুক্রাণুকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। ডিম্বাণু ‘Chemoattractant’ নামক রাসায়নিক নির্গত করে কিছু শুক্রাণুর গতি বাড়ায় এবং কিছু শুক্রাণুকে ধীর করে দেয়। এছাড়া, গর্ভাশয়ের ‘L mucus’ নামক মিউকাস নিম্নমানের শুক্রাণু ফিল্টার করে সরিয়ে দেয়। এবং শুক্রাণু নির্দিষ্ট ডিম্বাণুর ফলিকুলার ফ্লুইডের প্রতি আকৃষ্ট হয় যা নির্দিষ্ট শুক্রাণু ও ফলিকুলার ফ্লুইডের মিশ্রণের উপর নির্ভর করে। নারীর এই ফলিকুয়ার ফ্লুইড নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে বেশি আকৃষ্ট করে।
ডিম্বাণু যখন নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে নির্বাচন করে, সেটি ভেতরে প্রবেশ শুরু করে। তখন ডিম্বাণু রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে বাকি সব শুক্রাণুর মাথা কেটে ফেলে(Decipicate) করে ফেলে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মধ্যকার জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিম্বাণু শুক্রাণুকে নিষেকের জন্য নির্বাচিত করে। এবং এতে উল্লেখযোগ্য এই যে, ডিম্বাণুর নির্বাচিত শুক্রাণু ব্যতীত কোনো শুক্রাণুই নিষেকে অংশগ্রহণ করতে পারেনা।
Rabita Hasnan
Department of Genetic Engineering and Biotechnology
Shahjalal University of Science and Technology
তথ্যসূত্রঃ Fitzpatrick, J. L. et al. 2020. Chemical signals from eggs facilitate cryptic female choice in humans. Proc. R. Soc.