Bio Daily Blog Biotechnology অস্ট্রিচ ফুট সিন্ড্রোম
Biotechnology

অস্ট্রিচ ফুট সিন্ড্রোম

কখনও ভেবে দেখেছেন, মানুষের পা পাখির পায়ের মতো দেখতে হলে কেমন হত? কেমন হবে যদি কোনো এক গোত্রের মানুষের পায়ের আঙুলের পরিবর্তে দুটো বড় বড় নখর থাকে, ঠিক যেন উটপাখির পা? আজকের গল্প সেই রহস্যময় ভাদোমা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে, যারা জিম্বাবুয়ের কায়েম্বা অঞ্চলে বসবাস করে এবং অদ্ভুত এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা “অস্ট্রিচ ফুট সিন্ড্রোম” নামে পরিচিত।

তাহলে কি এটা শুধুই একটা গল্প, নাকি এদের অস্তিত্ব বাস্তবেই আছে? আর যদি থাকে, তাহলে সবার মনে নিশ্চয়ই একটা কৌতুহল হচ্ছে কীভাবে এদের পায়ের গঠন অন্য সবার থেকে আলাদা।

বিজ্ঞানের ভাষায়, এটি একটি জেনেটিক মিউটেশন, একট্রোড্যাক্টাইলি। একট্রোড্যাক্টাইলি (Ectrodactyly) হলো একটি বিরল জেনেটিক ত্রুটি , যেখানে হাত বা পায়ের মাঝের কয়েক আঙুল অনুপস্থিত থাকে, আর বাকি আঙুলগুলো ভিতরের দিকে বাঁকানো থাকে। এ কারণে হাত বা পা দেখতে অনেকটা “V” আকৃতির বা “লবস্টার ক্ল” (lobster claw) মতো লাগে। এটি সাধারণত একটি শারীরিক ত্রুটি হিসেবে ধরা হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এটি ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপনে বড় কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।

একট্রোড্যাক্টাইলি সাধারণত ক্রোমোজোম ৭-এ মিউটেশনের ফলে ঘটে। এই মিউটেশন জন্মের সময় থেকেই প্রভাব ফেলে এবং এটি বংশগতভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হতে পারে। এটি একটি অটোজোমাল ডমিন্যান্ট (autosomal dominant) বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ বাবা-মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের মাধ্যমে এটি সন্তানের মধ্যে আসতে পারে।

ক্রোমোজোম ৭-এ FGFR2 (Fibroblast Growth Factor Receptor 2) বা DLX5/DLX6 জিনগুলোর মধ্যে কোনো একটি জিনে মিউটেশন হলে একট্রোড্যাক্টাইলি ঘটে। এই জিনগুলো হাত ও পায়ের আঙুলের বিকাশের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন এই জিনগুলোতে মিউটেশন ঘটে, তখন আঙুলের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং হাত বা পায়ের আঙুলের মধ্যে কিছু অংশ অনুপস্থিত থাকে বা সঠিকভাবে বিকশিত হয় না।

এই অবস্থাটি শুধুমাত্র হাত ও পায়ের আঙুলের ওপর প্রভাব ফেলে না, এটি ব্যক্তির আত্মপরিচয় এবং সামাজিক জীবনে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্থান পায়। সাধারণত, শুধু ভাদোমা জনগোষ্ঠীতেই নয়, বরং অন্যান্য স্থানেও দেখা যায়। গবেষণা অনুসারে, প্রতি ৯০,০০০ জনে একজনের মধ্যে এই ত্রুটি দেখা যেতে পারে।

তবে, শুধু বিজ্ঞান নয়, ভাদোমা জনগোষ্ঠীর পুরাণেও এই বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা আছে। তাদের বিশ্বাস, তাদের পূর্বপুরুষরা ছিল পাখির মতো। তারা আকাশ থেকে মাটিতে নেমে এসেছিল এবং মানুষদের মধ্যে বসতি স্থাপন করেছিল। তখন তাদের ডিএনএ মিশে তৈরি হয়েছিল এক অদ্ভুত জেনেটিক মিশ্রণ, যা তাদের বর্তমান প্রজন্মকে দিয়েছে এই অদ্ভুত  উটপাখির মতো পা।

এই রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক ও পুরাণের মিশ্রণ সত্যি কৌতূহলী যা মানুষের বৈচিত্র্য এবং জেনেটিক ভিন্নতার একটি অনন্য উদাহরণ।


 Tahmid Zaman Samit

Genetic Engineering & Biotechnology

Shahjalal University of Science and Technology

Exit mobile version