অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা একটি জিনগত ব্যাধি, যার ফলে হাড়ের অপরিপক্ক বা অসম্পুর্ণ গঠন হয় অর্থাৎ এই রোগ হাড়কে মজবুত ও শক্ত হতে বাধা প্রদান করে।
এই রোগে আক্রান্তদের হাড় সহজেই ভেঙে যেতে পারে, এ কারণেই এই অবস্থাকে সাধারণত ভঙ্গুর হাড়ের রোগ বা brittle bone disease বলা হয়।
★অস্টিওজনেসিস ইম্পারফেক্টার কারণ কী?
অস্টিওজনেসিস ইম্পারফেক্টার কারণ হলো মানুষের জিনের এক ধরনের ত্রুটি, যে জিন সাধারণত প্রোটিন কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে, আর কোলাজেন হাড়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করে। যাদের অস্টিওজনেসিস ইম্পারফেক্টা হয় তারা অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।অর্থাৎ প্রথমত তাদের হাড়ে পরিমিত পরিমানে কোলাজেন থাকে না অথবা কোলাজেন থাকলেও তা সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে এটি তাদের হাড়কে নমনীয় বা দুর্বল করে ফেলে এবং হাড়ের গঠন সাধারনের তুলনায় অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়।আরার অনেক ক্ষেত্রে এর জন্য অঙ্গবিকৃতি (deformities )ও হয়ে থাকে।
সাধারণত জিনের এই ত্রুটি পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় ,আবার কখনো কখনো, গর্ভধারনের সময় জিনের এই ত্রুটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে থাকে।
★অস্টিওজেনেসিস ইমম্পারফেক্টার লক্ষণগুলি কি কি?
অস্টিওজেনেসিস ইমম্পারফেক্টার তীব্রতা বিভিন্ন রকম হতে পারে, কিছু লোক জানতেও পারে না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত , যতক্ষণ না তারা পড়ে যায় এবং
হাড় ভেঙে যায়।তাদের জন্য একমাত্র লক্ষণটি হলো হাড় ভাঙা।
এছাড়া বাকি লক্ষন গুলো হলোঃ
১.অস্থি বা হাড় খুব সামান্য আঘাতে ভেঙে যাওয়া।
২.হাড়ের ব্যথা।
৩.হাড়ের বিকৃতি।
৪.ছোট আকারের হাড়
৫.ভঙ্গুর দাঁত (ডেন্টিনোজেনসিস ইমম্পেরেক্টা বলা হয়)।
৬.চোখের কাছের সাদা অংশটি (sclera) নীল, বেগুনি বা ধূসর রঙ ধারন করে।
৭.ত্রিভুজাকার মুখ আকৃতি।
৮.যৌবনে শ্রবণশক্তি হ্রাস।
৯.হাড়ের সন্ধিস্থানে ফাঁপা হওয়া।
★অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টার প্রকারভেদঃ
চিকিৎকরা পরিস্থিতিটি কতটা মারাত্মক তার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা কে শ্রেণিবদ্ধ করেন। আজ অবধি, ১৫ ধরনের অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা চিহ্নিত করা হয়েছে।তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিন্মলিখিত ৪ ধরনেরই অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা দেখা যায়।
প্রকার ১ঃ
-কম গুরুতর এবং সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এটি।
-শিশু অবস্থায় হাড়ের বেশি গুরুতর ভংগুরতা।
-কিছু শিশু শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
প্রকার ২ঃ
-বেশি গুরুতর।
-জন্মের সময় সুগঠিত হাড় নিয়ে না জন্মানো।
-শিশুরা নরম মাথার খুলির হাড় নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
প্রকার ৩ঃ
খুবই গুরুতর
-অনেক শিশু হাড় ভাঙ্গা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
-দুর্বল পেশী।
-বাঁকা মেরুদণ্ড।
-সারা জীবন চিকিৎসার প্রয়োজন।
প্রকার ৪ঃ
-হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
-বেশিরভাগ শিশুদের বয়ঃসন্ধির আগে বেশিরভাগ ভঙ্গুরতা দেখা দেয়।
-সাধারণের চেয়ে ছোট।
ধনুকাকার পা এবং বাঁকা মেরুদণ্ড।
★অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা (ওআই)
কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
-এক্স-রে,
-ডিএনএ পরীক্ষা,
-রক্ত- পরীক্ষা/ মূত্র- পরীক্ষা,
-জৈব রাসায়নিক পরীক্ষা,
★অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা (ওআই) নিরাময় বা চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
-অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টার নির্দিষ্ট কোনও নিরাময় বা চিকিৎসা নেই। একটি শিশুর নির্দিষ্ট লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে ওকোপেশনাল থেরাপি, মেডিসিন এবং সার্জারি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।লক্ষ্য হ’ল হাড়ভাঙ্গা রোধ করা, যখন এটি ঘটে তখন সাথে যথাযথ চিকিৎসা করা, এবং পেশী শক্তিশালী করা।
★লক্ষণগুলি রোধ বা মুক্তি পাওয়ার চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
– হাড় ভাঙা প্রতিরোধ
-ভাঙ্গাহাড়ের যত্ন নেয়া।
-শারীরিক চিকিৎসা।
-ওষুধ।
-সার্জারি বা অপারেশন।
মাইমুন নাহার
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলোজি ডিপার্টমেন্ট।
জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্রঃ
https://kidshealth.org/en/parents/osteogenesis-imperfecta.html
https://www-hopkinsmedicine-org.cdn.ampproject.org/v/s/www.hopkinsmedicine.org/health/conditions-and-diseases/osteogenesis-imperfecta?amp_js_v=a6&_gsa=1&=true&usqp=mq331AQHKAFQArABIA%3D%3D#aoh=16111200913531&_ct=1611120849596&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&_tf=From%20%251%24s&share=https%3A%2F%2Fwww.hopkinsmedicine.org%2Fhealth%2Fconditions-and-diseases%2Fosteogenesis-imperfecta
https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/15807-osteogenesis-imperfecta
Leave feedback about this