একটা সময় ছিল যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) শুধুমাত্র বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর অংশ ছিল, কিন্তু আজ, AI আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এই বিপ্লবের পেছনে যে দু’জন বিজ্ঞানীর অবদান সবচেয়ে বেশি, তারা হলেন জন হপফিল্ড এবং জিওফ্রি হিন্টন। ২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তারা, তাদের যুগান্তকারী কাজের জন্য যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
“আমি আজ MRI করাতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু নোবেল পাওয়ার খবর শুনে সেটা বাতিল করতে হলো!”
হপফিল্ড ছিলেন একজন পদার্থবিদ, যিনি মস্তিষ্কের স্মৃতি পুনর্গঠনের পদ্ধতি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি “হপফিল্ড নেটওয়ার্ক” নামের একটি মডেল তৈরি করেন যা অসম্পূর্ণ ডেটা থেকে সম্পূর্ণ ছবি বা নিদর্শন পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম। তার এই গবেষণা শুধু মস্তিষ্কের কাজ বোঝার জন্য নয়, বরং মেশিন লার্নিংয়ের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করে।
অন্যদিকে, হিন্টন, যিনি “গডফাদার অফ AI” নামে পরিচিত, হপফিল্ডের তত্ত্বকে আরও উন্নত করে “বল্টজম্যান মেশিন” তৈরি করেন, যা বড় ডেটা সেট থেকে নিদর্শন চিহ্নিত করতে সক্ষম। তার কাজ আজকের গভীর শিক্ষণ (Deep Learning) প্রযুক্তির মূল ভিত্তি। তার তৈরি করা নিউরাল নেটওয়ার্ক এখন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, স্মার্টফোনের মুখের স্বীকৃতি প্রযুক্তি, এবং এমনকি অনেক স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপ্লিকেশনেও ব্যবহৃত হয়।
নোবেল পুরস্কারের ঘোষণার সময়, হিন্টন এক মজার মন্তব্য করেন, “আমি আজ MRI করাতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু নোবেল পাওয়ার খবর শুনে সেটা বাতিল করতে হলো!” এই মন্তব্যটি তার সাধারণ এবং বিনয়ী চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলে, তবে এর পেছনে ছিল একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক অর্জন, যা আমাদের ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে নতুন দিশা দেখিয়েছে।
তাদের এই কাজ শুধু প্রযুক্তির দুনিয়ায় নয়, মানুষের বুদ্ধিমত্তার ধারণাকেও নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। হপফিল্ড এবং হিন্টনের গবেষণা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা কতটা বিশাল, এবং এটি কিভাবে আমাদের জীবনে শিল্প বিপ্লবের মতো পরিবর্তন আনতে পারে..