চকচকে খোলস বিশিষ্ট জলজ প্রাণী কাঁকড়া সমুদ্র সৈকতে, নদীর তীরে কিংবা পুকুর পাড়ে দল বেঁধে কখনও বা একাই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। পৃথিবীর সব সমুদ্রে, নদীতে এমনকি পুকুরেও নানা প্রজাতির কাঁকড়ার বিচরণ দেখতে পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক সাংসারিক জীবনের মায়া ত্যাগ করে নিজের বাসস্থান ছেড়ে সন্ন্যাসী হয় মানুষ। মানুষের মতো এক ধরনের কাঁকড়াও বার বার নিজের বাসস্থান পরিবর্তন করে সন্ন্যাসী জীবনযাপন করে। ইংরেজিতে এরা “Hermit Crab” নামে পরিচিত, বৈজ্ঞানিক নাম Paguroidea। এরা আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) পর্বের Crustacea উপপর্বের অন্তর্গত প্রাণী।
Scientific Classification:
- Kingdom: Animalia
- Phylum: Arthropoda
- Subphylum: Crustacea
- Class: Malacostraca
- Order: Decapoda
- Infraorder: Anomura
- Species: Paguroidea
বিশ্বব্যাপী ৮০০টিরও বেশি প্রজাতির সন্ন্যাসী কাঁকড়া রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই সমুদ্রের তীর থেকে শুরু করে তলদেশ পর্যন্ত সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতায় বাস করে। তবে এদের কিছু প্রজাতিকে ক্রান্তীয় অঞ্চলে শুকনা মাটিতে বসবাসরত দেখা যায়। এদের কোনো কোনটির আকারে বেশ বড় ও হয়ে থাকে, আবার কিছু প্রজাতি আকারে ছোট। সন্ন্যাসী কাঁকড়ার বেশিরভাগ প্রজাতির আকার ১/২ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায়ই দেখা মেলে ছোট ছোট সন্ন্যাসী কাঁকড়ার।
দশ জোড়া সন্ধিপদীয় ঊপাঙ্গ বিশিষ্ট খোলসাবৃত দেহের অধিকারী প্রাণী সন্ন্যাসী কাঁকড়া সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায়ই বেশি দেখা যায়। এরা জোয়ারের সময় সমুদ্রে ডুবে যায় কিন্তু ভাটার সময় পানির উপরে থাকে। সন্ন্যাসী কাঁকড়া সব সময় মৃত শামুকের খোলস পিঠে করে বয়ে বেড়ায়। এই মৃত শামুকের খোলসের ভেতর ঢুকে ভেতরের অক্ষকে শক্ত ভাবে আঁকড়ে সমুদ্রের ঢেউ থেকে এরা নিজেকে রক্ষা করে।
অধিকাংশ সন্ন্যাসী কাঁকড়াই নরম তলপেটের অধিকারী। বয়সের সাথে সাথে এদের দেহ ও তলপেটের শেষ প্রান্তটি যখন আকারে বৃদ্ধি পায়। তাই বয়স বাড়ার সাথে সন্ন্যাসী কাঁকড়া তার খোলস বদলায়৷ তখন সন্ন্যাসী কাঁকড়া তার পুরানো খোলসটি ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের আরেকটি মৃত শামুকের খোলস খুঁজে নেয়। এমন খোলক তারা নেয় যেটাতে সহজেই ঢোকা ও বের হওয়া যায়৷
নতুন খোলস খুঁজে পেলে সন্ন্যাসী কাঁকড়া আগে দেখে ভেতরে কেউ আছে না, কারণ এরা একা থাকতেই পছন্দ করে৷ পুরাতন খোলস ত্যাগ করলে কিংবা মারা গেলে এরা এক বিশেষ ধরণের গন্ধ (ফোরামেন) ছাড়ায়, যার কারণে খোলসের সন্ধ্যানে থাকা অন্য সন্ন্যাসী কাঁকড়া বুঝতে পারে সেই খোলস ফাঁকা হয়েছে। এভাবেই বার বার পুরানো বাসস্থান পেছনে ফেলে যাওয়ার আচরণের জন্যই এদের সন্ন্যাসী কাঁকড়া বলা হয়।
প্লাস্টিক দূষণের শিকার হার্মিট ক্র্যাব!
সাধারনত স্থলজ হার্মিট কাঁকড়া সমুদ্র তীরে এসে খোলস সংগ্রহ করে৷ কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের কারণে সমুদ্রের পাড়ে খোলোসের চেয়ে প্লাস্টিক সামগ্রী বেশি পড়ে থাকতে দেখা যায়৷ ফলে ভুলবশত অনেক সময় এরা প্লাস্টিক সামগ্রিকে তাদের বাসস্থান শামুকের খোলস মনে করে ব্যবহার করে৷ প্লাস্টিকের সামগ্রিক তল মসৃণ হওয়ায়, এতে ঢুকতে পারলেও তারা বের হতে পাড়ে না। এভাবে প্লাস্টিক থেকে বের পেরে আটকে গিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য হার্মিট কাঁকড়া মারা যাচ্ছে যা এই প্রানীটির অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাসনুন মেহনাজ
শিক্ষার্থী, সমুদ্র আইন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র: