সারাদিন নিজের সকল কাজ শেষে আপনি যখন নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফেরেন তখন প্রায় দিনের উজ্জ্বল আলো নিভু নিভু হয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে। এমন সময় আপনি লক্ষ্য করলেন আপনার বাসার কাছাকাছি প্রায় প্রতিটি গাছ থেকে হাজার হাজার পোকার আওয়াজ একসাথে ভেসে আসছে। এই পোকাগুলোর যত উচ্চস্বরে আওয়াজ আপনি শুনছেন এরা আকারে কিন্তু তত বড় নয়। এরা আকারে সাধারণত ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটারের হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ডানাযুক্ত এই পোকাটির ইংরেজি নাম সিকাডা (Cicada) এবং বাংলায় এদের “উচ্চিংড়ে” বা “ঘুর্ঘুরে” পোকা বলা হয়। এরা সাধারণত এদের উচ্চ আওয়াজের জন্যই এত পরিচিত।
এত ক্ষুদ্র আকারের একটি পোকা কিভাবে এতো উচ্চ শব্দে আওয়াজ করতে পারে? – এই ক্ষুদ্র পোকাটির বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন ধরনের শব্দ তৈরি করতে পারে। এদের পেটের মধ্যে এক ধরনের “টিম্বল” নামক বিশেষ অঙ্গ থাকে। যেটা দ্রুত সংকোচিত এবং প্রসারিত হওয়ার ফলে শব্দ তৈরি হয়।
অ্যান্টার্কটিকা বাদে প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই এই ক্ষুদ্র পোকাটি পাওয়া যায়। সিকাডার প্রায় ৩০০০ প্রজাতি রয়েছে।এর মধ্যে কেবলমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই এদের প্রায় ১৫০ টি প্রজাতির দেখা মেলে। এই পোকাগুলি সমুদ্র তটের নিকট এবং উষ্ণ পরিবেশে বেশি পাওয়া যায়।
এদের প্রজননের সময় সাধারণত গ্রীষ্মকাল, বিশেষ করে মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে। এই সময়ে পুরুষ সিকাডা তাদের বিশেষ গান ( উচ্চ শব্দ ) গেয়ে স্ত্রী সিকাডাদের আকর্ষণ করে। জীবনের বেশিরভাগ সময় মাটির নিচে নিম্ফ হিসেবে কাটায়, যা ১৩ বা ১৭ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যখন তারা অবশেষে মাটির নিচ থেকে বের হয়, তখন তাদের প্রজননের জন্য খুবই স্বল্প সময় থাকে, যা প্রায় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যে তারা সঙ্গী খোঁজা, প্রজনন এবং ডিম পাড়ার উপর মনোযোগ দেয় এবং তারপর মারা যায়। এদের জীবনচক্র চারটি প্রধান ধাপে বিভক্ত:
- ডিম: স্ত্রী সিকাডা গাছের ডালে ডিম পাড়ে। ডিমগুলি প্রায় ৬-১০ সপ্তাহের মধ্যে ফুটে যায়।
- নিম্ফ: ডিম থেকে নিম্ফ বের হয় এবং মাটির নিচে চলে যায়। তারা মাটির নিচে ২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে, নির্ভর করে সিকাডার প্রজাতির উপর।
- মোল্টিং: নিম্ফ মাটি থেকে বের হওয়ার পর, তারা একটি উপযুক্ত স্থানে উঠে আসে এবং তাদের পুরানো খোলস ত্যাগ করে। এই প্রক্রিয়াটিকে মোল্টিং বলা হয়। মোল্টিংয়ের পর, প্রাপ্তবয়স্ক সিকাডার ডানা শুকিয়ে যায় এবং তারা উড়তে সক্ষম হয়।
- প্রজনন: প্রাপ্তবয়স্ক সিকাডা প্রজনন করে এবং জীবনচক্র পুনরায় শুরু হয়।
এই পোকার বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন আয়তন, রঙ, ও আকৃতির হয়ে থাকে। এই পোকার লার্ভা ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে এবং মাটিতে বেশিরভাগ জীবন কাটায়, যেখানে তারা মৃত প্রাণীর শরীর থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে। অন্য দিকে প্রাপ্ত বয়স্ক বেশিরভাগ সিকাডারা গাছে বসবাস করে এবং গাছের জাইলেম থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে।
ইয়াহু নিউজ অনুযায়ী, ব্রুড এক্স এর সময়ে যদি আপনি এরা যেই গাছে আছে সেই গাছের দিকে তাকান, তখন এরা ভয় পেয়ে আপনার শরীরে হিসু করে দিতে পারে। কিন্তু এদের হিসু/প্রস্রাব মানুষের বা অন্য কোন প্রাণীর কোন ক্ষতি করে না। কারণ এই তরল পদার্থ এদের শরীরে গাছের জাইলেম থেকে তৈরি হয়। ভয় না পেয়েও এরা সবচেয়ে উষ্ণ, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে হিসু করে থাকে। কারণ জাইলেমে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা কিনা তারা গাছের শিকড় থেকে পাতায় পরিবহন করে থাকে, এছাড়াও এতে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে এই তরলটি সিকাডাদের “প্রচুর প্রস্রাব” করতে প্ররোচিত করে।
সিকাডারা প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। সিকাডারা বয়সের সাথে সাথে আকারে ও বড় হতে থাকে।
নাম: নাবিলা রব
ইনস্টিটিউট: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
তথ্য উপাত্ত:
- Landau, D. (n.d.). What You Need to Know about Periodical Cicadas. The Nature Conservancy. Retrieved August 8, 2024, from https://www.nature.org/en-us/get-involved/how-to-help/animals-we-protect/what-to-know-about-brood-x-cicadas/
- Krosofsky, A., & Krosofsky, A. (2021, June 1). Cicada Pee: What You Need to Know. Green Matters. https://www.greenmatters.com/p/cicada-pee