স্তন ক্যান্সারের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এ ধাপগুলো থেকে বোঝা যায়, ক্যান্সার কি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করছে নাকি আশেপাশের কোষগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। একজন রোগী স্তন ক্যান্সারের কোন ধাপে রয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই ডাক্তারগণ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
ধাপ-০
এটি স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপ। এ ধাপে ক্যান্সার কোষের আকার মূলত ছোট হয় এবং ক্যান্সার স্তনের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে। স্তন ক্যান্সার ধাপ-০ নিয়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১০০%
ধাপ-১
ধাপ-১ এ ক্যান্সার কাছের কোনো লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্যান্সার কোষগুলো প্রাথমিক ধাপ (ধাপ-০) এর চেয়ে কিছুটা বড় হয়। এ ধাপে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১০০%
ধাপ-২
স্তন ক্যান্সার ধাপ-২ বলতে বোঝায়, ক্যান্সার কোষ আকারে বড় এবং আশেপাশের টিস্যু ও লিম্প নোডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ৯৩%
ধাপ-৩
৩য় স্তরের ক্যান্সার সাধারণত ৯টি লিম্ফ নোড অথবা এর থেকে বেশী লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। আর আক্রান্ত নারীর ৭২% সম্ভাবনা রয়েছে বেঁচে থাকার।
ধাপ-৪
স্তন ক্যান্সারের ৪র্থ স্তর সবচেয়ে ভয়ানক। এ ধাপে ক্যান্সার স্তন এবং লিম্প নোড ছাড়াও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে যেমনঃ হাড়, ফুসফুস, মস্তিষ্ক প্রভৃতি। একে সেকেন্ডারি বা ম্যাটাস্টেটিক ক্যান্সারও বলা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এ ধাপে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা হল ২২%
ডাক্তারগণ এ ধাপগুলোর উপর ভিত্তি করে স্তন ক্যান্সারকে প্রতীকী অক্ষর T, N এবং M দ্বারা ৩ টি ভাগে ভাগ করেছেনঃ
- T বলতে বোঝায় টিউমার অথবা লাম্প যা শুধু স্তনেই অবস্থান করে।
- N হল নোড অথবা লিম্প নোড এর প্রতীকী অক্ষর । স্তন এর আশেপাশে অসংখ্য লিম্প নোড অবস্থান করে। ক্যান্সার ধাপঃ০-ধাপঃ৩ থেকে বোঝা যায়, ক্যান্সার লিম্প নোডে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা আর যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কতটি নোডে।
- M মানে ম্যাটাস্টেসিস যা থেকে বোঝা যায়, ক্যান্সার স্তন এবং লিম্প নোডসহ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘরে বসেই স্তন পরীক্ষা করার উপায়
- গোসল করার সময় স্তনে হাত দিয়ে ভালোভাবে দেখতে হবে কোনো চাকা বা শক্ত দানার মতো আছে কিনা।
- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার উপর তুলে দেখতে হবে স্তন এর কোথাও লালচে অথবা ফোলা ভাব আছে কিনা
- বিছানায় বা মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করার সময় ডান দিকে ঘাড়ের নিচে একটি বালিশ রাখতে হবে। এরপর ডান হাত মাথার পিছনে রাখতে হবে এবং বাম হাতের আঙ্গুলগুলো স্তন এর উপর রেখে ঘড়ির কাঁটার ঘোরার দিকে চক্রাকারে ঘোরানোর পর স্তনবৃন্তের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে এক ইঞ্চি অগ্রসর হওয়ার পর আবার চক্রাকারে ঘুরিয়ে স্তন পরীক্ষা করতে হবে শক্ত চাকা বা পিন্ড অনুভূত হয় কিনা।
- স্তনবৃন্তে হালকাভাবে চাপ দিয়ে দেখতে হবে কোনো তরল নিঃসৃত হয় কিনা।
এ পরীক্ষাগুলো করার সময় যদি স্তন এর কোথাও শক্ত পিন্ড আছে বলে অনুভূত হয় অথবা কোনো তরল নিঃসৃত হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতি ৬ মিনিটে যে রোগে একজন নারী আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১১ মিনিটে একজন আক্রান্ত নারীর মৃত্যু হয় তা মোটেও লজ্জার বা লুকানোর কিছু নয়।
সাদিয়া জামান
ডিরেক্টর অব ডেইলি সায়েন্স প্রজেক্ট, বায়ো ডেইলি
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১১০০
তথ্যসূত্র:
Leave feedback about this